ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মেম্বার পদে বিজয়ী হয়েছেন ফিলিপাইনের মেয়ে জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার জুলহাস।
তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত (১, ২ ও ৩ নম্বর) ওয়ার্ডে মাইক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেসমিন পান ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বক প্রতীকের শিমু আক্তার পান ১ হাজার ৮৩৭ ভোট।
বিজয়ী হওয়ার পর জেসমিন গ্রামের রাস্তায় বের হলেই উৎসুক মানুষ তাকে দেখতে ভিড় করছেন। তার মুখে ইংরেজি কথা শুনে অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করেন। স্বামী জুলহাস মিয়া দোভাষী হিসেবে সাধারণ মানুষের কথা ইংরেজিতে অনুবাদ করে বুঝিয়ে দেন জেসমিন আক্তারকে। তার এমন বিজয়ের ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে জেলাজুড়ে।
জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকার জন্ম ফিলিপাইনে। পড়াশোনা করেছেন সেখানকার নামী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ বিভাগে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর সিঙ্গাপুরে চাকরি করতে গিয়ে পরিচয় হয় বাংলাদেশি তরুণ জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম, এরপর বিয়ে।
২০১০ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। খ্রিষ্টান থেকে মুসলিম হওয়ার পর তার নাম রাখা হয় জেসমিন আক্তার জুলহাস।
জম্মসূত্রে ফিলিপাইনের নাগরিক হলেও, বিবাহসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক জেসমিন আক্তার জুলহাস। জিন ক্যাটামিন জুলহাসের প্রেমের টানে মা-বাবা ছেড়ে চলে আসেন ১০ বছর আগে বাংলাদেশে। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দবরদস্তা গ্রামের আব্দুস সামাদ মণ্ডলের ছেলে জুলহাস। ১৯৯৮ সালে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরি করার সময় সহকর্মী জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
জুলহাস জানান, জেসমিন মানুষকে নানাভাবে উপকার করার চেষ্টা করেন। তার ভেতর নেতৃত্বের গুণ রয়েছে। তাই এলাকাবাসীর অনুরোধে মেম্বার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেসমিন।
নির্বাচন করার প্রসঙ্গে জিন ক্যাটামিন জানান, তার নির্বাচনে দাঁড়াতে ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এলাকার মানুষ জোর করে বলেছে নির্বাচন করতে। গ্রামের লোকজনের সমর্থন ও ভালোবাসা তাকে আগ্রহী করে তোলে। তাই তাদের কথা রাখতেই নির্বাচনে অংশ নেন। এ দেশের মানুষজন তাকে এত আপন করে নিয়েছে তার বড় প্রমাণ তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করা। তাকে ভোট দিয়ে যারা বিজয়ী করেছেন তাদের তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং গ্রামের উন্নায়নে কাজ করতে সবার সহযোগিতা চান।
জিন ক্যাটামিন আরও বলেন, “স্বামী জুলহাসের জন্য নিজের দেশ ও বাবা-মাকে ছেড়ে বাংলাদেশ ছুটে আসি। এ দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত, এলাকার গরিব দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।”